ঢাকা,২৮শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বিএনপির ‘একলা চলো’ নীতি, জোটে ক্ষোভ

bnpp.jpg

স্টাফ রিপোর্টারঃ জোট শরিকদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই বিভিন্ন সংসদীয় আসনের উপনির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেয়া ছাড়াও বিএনপি এককভাবে অনেক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এমনকি বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে এককভাবে মাঠে রয়েছে। বিএনপির এ ‘একলা চলো নীতিতে’ ২০ দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্টে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শরিকরা। তাদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে।

জোট নেতারা জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সংসদ সদস্যদের শপথ নেয়ার সিদ্ধান্তের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছিলেন শরিক দলের অনেকে। এ নিয়ে প্রকাশ্যে বিএনপির সমালোচনাও করেন কেউ কেউ। সংসদে গিয়ে সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে, এখন উপনির্বাচনে অংশ নিচ্ছে, আবার সরকারকে অবৈধ বলছে-এ ধরনের দ্বিচারিতার রাজনীতি বিএনপিকে আরও জনবিচ্ছিন্ন করে ফেলবে। যার মাশুল দিতে হবে আগামী দিনের রাজনীতিতে।

জোট নেতারা আরও বলেন, উপনির্বাচনে অংশ নিতে হলে বিএনপির উচিত প্রার্থী মনোনয়ন দেয়ার আগে অন্তত জোট নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করা। যাতে ভোটের মাঠে সবাইকে পাশে পাওয়া যায়। এটি না করায় দুই জোটের নেতৃত্বে থাকা বিএনপিকে মাঠে একাই থাকতে হচ্ছে। এ ছাড়া আট মাস ধরে দুই জোটের সঙ্গে বিএনপির কোনো বৈঠকও হয়নি। শুধু জুলাইয়ে ২০ দলের সঙ্গে একবার ভার্চুয়াল বৈঠক হয়। এ অবস্থায় দুই জোট এখন অকার্যকর হয়ে পড়েছে।

তবে বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক জানান, এ মুহূর্তে দল নিয়ে বেশি ভাবছে হাইকমান্ড। এ ছাড়া দলের অধিকাংশ নেতাকর্মী মনে করে, দুই জোটের কারণে বিএনপিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জোটের ব্যানারে কোনো কর্মসূচি দিলে সেখানে বিএনপির নেতাকর্মীরাই থাকেন। ২০ দলীয় জোট বা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীদের পাওয়া যায় না। বিএনপি নেতারা আরও বলেন, ২০ দলীয় জোট বা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হয়েছিল একটি বিশেষ প্রেক্ষাপটে। তাদের সঙ্গে বিএনপির আদর্শিক জোট হয়নি, এটা একটি নির্বাচন ও আন্দোলনকেন্দ্রিক জোট। তবে দুই জোটের সঙ্গে টানাপোড়েন চলছে, তা বলা যাবে না। সরাসরি বৈঠক কম হলেও জোটের সঙ্গে সিনিয়র নেতাদের যোগাযোগ অব্যাহত আছে। আবার এটাও ঠিক-গণফোরামসহ কয়েকটি শরিক দলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল চলছে। আবার এখনও করোনাভাইরাস আছে। এ মুহূর্তে কৌশলগত কারণেই কোনো জোটের সঙ্গে বৈঠক করা হচ্ছে না। তবে শিগগির ভার্চুয়ালে কিংবা সরাসরি বৈঠক করা হবে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ২০ দলীয় জোটে কিছুটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়। ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ জোট থেকে বেরিয়ে যান। এরপর জোটে আর কোনো সমস্যা নেই। করোনার কারণে হয়তো দেখা হয় না; কিন্তু সবার সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। আর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়েও বড় কোনো সমস্যা নেই। ফ্রন্ট ও জোটের ঐক্য অটুট আছে। এ ছাড়া এ মুহূর্তে আমরা দল নিয়ে বেশি ভাবছি। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরিক নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বর্তমানে উপনির্বাচনে বিএনপি এককভাবে অংশ নিচ্ছে। কিন্তু অংশ নিয়ে তাদের যেমন কোনো লাভ হবে না, জনগণেরও কোনো লাভ হবে না। এসবের মাধ্যমে বিএনপি দু-একটি আসনে জিতলেও জনগণের কিছু আসে-যায় না।

গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, কোনো রকমের দূরত্ব নেই। করোনাভাইরাসের জন্য নরমাল দূরত্ব আছে। উপনির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন বা কোনো কর্মসূচি নিয়ে একসঙ্গে আমরা বসিনি বা কোনো আলোচনা করিনি। কিন্তু আমরা যেহেতু কোনো প্রার্থী দিচ্ছি না, তাই আমার কর্মীদের জানিয়ে দিয়েছি-বিএনপি প্রার্থীদের সহযোগিতা করতে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোট‘নির্ভরতা’ কমিয়ে দিয়েছে বিএনপি। এই দুই জোটের সঙ্গে দলটির সম্পর্ক এখন অনেকটা কাগজে-কলমে। এরইমধ্যে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটিতে জামায়াত ছাড়া নিয়ে আলোচনা হয়।

এরপর জোটের শরিকদের মধ্যে নতুন করে অস্বস্তির সৃষ্ট হয়। স্থায়ী কমিটির অধিকাংশ সদস্যই জামায়াত ছাড়তে একমত হলেও এ ইস্যুতে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বিএনপি। এরমধ্যে ঈদুল আজহার দিন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দলের স্থায়ী কমিটির নেতারা সাক্ষাৎ করেন। ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় নতুন করে টানাপোড়েনের সৃষ্টি হয়। আগামী দিনে জোট-ফ্রন্টকে নিয়ে বিএনপি কতদূর এগোবে, তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। বিএনপির নেতাকর্মীদের বড় অংশ বলছেন, দেশের সবচেয়ে বড় একটি রাজনৈতিক দল বিএনপি। দলের তৃণমূল পর্যন্ত নিজস্ব একটি শক্তি আছে। আগামী দিনেও বিএনপিকে নিজের শক্তিতেই দাঁড়ানো উচিত। জোট-ফ্রন্টের নির্ভরতা থেকে সরে আসা জরুরি। তাদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের দায় বিএনপি নিতে পারে না। এতে দলের নেতাকর্মীরাও মূল্যায়িত হবে এবং সংগঠন হিসেবেও আরও শক্তিশালী হবে।

সূত্র জানায়, দুই জোটের মধ্যে একমাত্র বিএনপিই সংসদীয় আসনের উপনির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। অন্য কোনো শরিক দল বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীন কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। এর মধ্যে ২০ দলের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামী সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে কাউকে সমর্থন না জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

জানতে চাইলে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার যুগান্তরকে বলেন, বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীন আর কোনো নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী অংশ নেবে না-এখনও এ সিদ্ধান্ত বহাল আছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অন্য কোনো দলের প্রার্থীকে সমর্থনের বিষয়ে তিনি বলেন, সমর্থনের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ নিয়ে এখনও আমাদের আলোচনা হয়নি। স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোয় সামাজিক অবস্থান বেশ গুরুত্বপূর্ণ, তবে রাজনীতি খুব বেশি কাজ করে না।

বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, উপনির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে ২০ দলীয় জোটে কোনো আলোচনা হয়নি। বিএনপি এককভাবে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ও নিচ্ছে। তিনি বলেন, আমি বর্তমান সরকারের অধীন যে কোনো নির্বাচনে যাওয়ার বিপক্ষে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, পাবনা-৪ উপনির্বাচনে বিএনপি ভোট পেয়েছে আড়াই ভাগ। কোনো উন্মাদও এটা বিশ্বাস করবে না। সুতরাং বিএনপির নির্বাচনে যাওয়ার এ হটকারী সিদ্ধান্তে দলটি সাংগঠনিকভাবে আরও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে আমি মনে করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

scroll to top