ঢাকা,৮ই জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

প্রযুক্তির অপব্যবহারই সামাজিক অবক্ষয়ের মূল কারণ : জয়নুল আবেদিন জনি

FB_IMG_1603106221919.jpg

বর্তমান যুগ তথ্য ও প্রযুক্তির যুগ। বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের যুগ। তথ্য প্রযুক্তির অভাবনীয় সাফল্যের ফলে মানুষের জীবনে এসেছে বিরাট পরিবর্তন। মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক সহজলভ্য হয়েছে। মানুষের হাতের মুঠোয় চলে এসেছে পুরো বিশ্ব। কিন্তু এতো কিছুর পর?ও প্রযুক্তি মানুষের জীবনে অনেক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। জেনে হোক অথবা না জেনে মানুষ এসব প্রযুক্তির দ্বারা ধ্বংসের দিকে এগিয়ে চলছে। আমি প্রযুক্তির সেই নেতিবাচক ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করবো।

ভিডিও গেম:

বর্তমানে স্মার্টফোন সবার হাতের মুঠোয়। এর ফলে সবার হাতে ভিডিও গেম সহজলভ্য হয়ে গেছে। কিন্তু কিছু বাদে প্রায় সকল ভিডিও গেম মানুষের জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ক্ষতিকর। মানুষ এসকল গেমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নিজেদের মূল্যবান সময় অপচয় করছে। এসকল গেমের মূল উদ্দেশ্যই হলো খুন করা। শত্রুকে হত্যা করা। আপনি যত বেশি খুন করবেন তত বেশি পয়েন্ট পাবেন এবং বিজয়ী হবেন। যা মানুষকে মানসিকভাবে খুন করতে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। কিছু গেমে নারীদের প্রায় উলঙ্গ করে উপস্থাপন করা হয়। তাদের বিকিনি পড়িয়ে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। যা নারীদের ভোগ্যপণ্যের মতো ভাবতে এসব গেম মানসিকভাবে প্ররোচনা দিতে পারে। অনেকে এখান থেকে ধর্ষণের মোহ লাভ করতে পারে। আবার অনেক গেমে প্রতিমা পূজা করতে হয় যা শিরকের শামিল। কিছু গেমে অ্যালকোহলসহ বিভিন্ন নেশা খাওয়া দেখানো হয়। যা ছেলেমেয়েদের নেশা জাতীয় দ্রব্যের প্রতি আকৃষ্ট করতে পারে। কিন্তু আমাদের অভিভাবকেরা এসব উপলব্ধি না করেই ছেলে মেয়েদের হাতে গেম তুলে দিচ্ছেন। যার নেতিবাচক ফল ইতোমধ্যে আমরা দেখতে পাচ্ছি। বর্তমানে তুমুল জনপ্রিয় একটি গেম পাবজি। এটিও আমাদের খুন হত্যা প্রতিমা পূজার শিক্ষা দিতে সক্ষম। আবার ছেলেমেয়েরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা এসকল গেমে নিজেদের সময় নষ্ট করছে যা তাদের পড়ালেখা থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। তাই আমাদের এসকল গেম থেকে দূরে থাকতে হবে। নৈতিকতার শিক্ষা অর্জন করতে হবে। এ ব্যাপারে অভিভাবকদের সবচেয়ে বেশি সচেতন হতে হবে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার:

বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের জয়জয়কার চলছে। বর্তমানে এমন কোন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুরূহ যার ফেসবুক আইডি নেই। আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা এ সবে সময় কাটাই। অথচ আমাদের কোনো ক্লান্তি লাগে না। আসলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোও আমাদের বিভিন্নভাবে আকৃষ্ট করার চেষ্টায় ব্যস্ত। এ সকল সামাজিক মাধ্যম থেকে যতটুকু না আমরাও উপকার পাই তার থেকে বেশি সময় অপচয় করি। যে সময় আমরা এসব নিয়ে ব্যস্ত থাকি তার শতকরা ৯০ ভাগ অযথা যার কোন উপকার নেই। এভাবে আমরা সরাসরি পড়ালেখা থেকে অনেক দূরে চলে যাচ্ছি। বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা, আড্ডাসহ সকল বিনোদনমূলক সামাজিক কর্মকা- থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছি। যার ফলে অনেকে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে বিপথে অগ্রসর হচ্ছে। সামাজিক বন্ধন কমে যাচ্ছে। একে অপরের প্রতি হিংসা বিদ্বেষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

পর্নোগ্রাফিতে আসক্তি:

মানুষের হাতের মুঠোয় মোবাইল থাকায় আজকাল পর্নোগ্রাফি অনেক সহজলভ্য হয়ে গিয়েছে। যেকোনো সময় মানুষ ইচ্ছে করলে পর্নোগ্রাফি দেখতে পারে। এতে অনেক যুবক এমনকি কিশোররা পর্যন্ত আসক্ত হয়ে যাচ্ছে। ফলে তাদের দ্বারা ধর্ষণ, খুন, ইভটিজিংয়ের মতো মারাত্মক অপরাধগুলোর মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। এখন এমন হয়েছে যে শতকরা ৯০ ভাগ ছেলে হস্তমৈথুনের সাথে সম্পর্কযুক্ত। মেয়েদের সংখ্যাও আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে সিনেমা-নাটকে অবাধে অশ্লীল কার্যকলাপ দেখানো হচ্ছে। পর্নোগ্রাফি সহজলভ্য হয়ে গিয়েছে সিনেমা-নাটকে। এতে সামাজিক অবক্ষয়ের মাত্রা সর্বনিম্ন স্তরে এসে পৌঁছেছে। বর্তমানে যে ধর্ষণের মহামারী শুরু হয়েছে তাতে এই পর্নোগ্রাফির আসক্তি অনেক বড় ভূমিকা রাখছে বলে আমি মনে করি।

এছাড়াও তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য চুরি হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে আমাদের ব্যক্তিগত জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে অনেক সময়। ফেসবুকে ফেক আইডি দ্বারা প্রতারণার শিকার হচ্ছে অনেকে। ভুয়া পরিচয় দিয়ে অনেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অনেকে কারো অন্তরঙ্গ ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করে দিচ্ছে। ফলে ওই ভুক্তভোগীদের আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে। এমন হাজারো অনৈতিক ঘটনা প্রতিনিয়ত তথ্য প্রযুক্তি দ্বারা ঘটে চলেছে যা আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও তথ্যপ্রযুক্তির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার চোখের সমস্যা করে। মাথাব্যথা, খিচুনিসহ অনেক রোগ সৃষ্টি করে।

এ থেকে বাঁচার উপায় কি:

তথ্যপ্রযুক্তির এই সকল অপব্যবহার হতে বাঁচতে আমাদের সামাজিকভাবে সচেতন হতে হবে। আমাদের সামাজিকতা বৃদ্ধি করতে হবে। ছেলেমেয়েদের ভিডিও গেমের আসক্তি থেকে মুক্ত করতে খেলাধুলার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করতে হবে। প্রিন্ট মিডিয়ায় ব্যাপক সচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। প্রযুক্তির ব্যবহার সীমিত করতে হবে। অপ্রয়োজনে প্রযুক্তির ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। গল্প, সাহিত্য আড্ডার প্রতি যুবকদের মনোযোগ বাড়াতে হবে। পরিবারের সাথে বেশি বেশি সময় কাটাতে হবে। বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। নৈতিকতা ও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে হবে। সর্বোপরি অভিভাবকদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে সন্তানদের ওপর। তাহলেই আমাদের যুব সমাজকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

scroll to top