ঢাকা,২৮শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

সিলেটে ধর্ষক ধরেও থামছে না ধর্ষণ

chika.jpeg

নিজস্ব প্রতিবেদক :: সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে নববধূকে গণধর্ষণের ঘটনায় তোলপাড় ওঠে সারাদেশে। ঝড় ওঠে প্রতিবাদ ও নিন্দার। ধর্ষকদের শাস্তির দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে সিলেট। এখনো প্রতিদিন বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের উদ্যোগে প্রতিবাদী কর্মসূচি পালিত হয়েছে। ইতোমধ্যে গণধর্ষনের ঘটনার সাথে জড়িত সকল আসামী গ্রেফতারও হয়েছে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কঠোরতা, সাধারণ মানুষের প্রতিবাদী আন্দোলন কিছুই যেন দমাতে পারছে না ধর্ষক নামের নরপশুদের। প্রায় প্রতিদিনই সিলেটের কোথাও না কোথাও ঘটছে ধর্ষন বা ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনা। এতে উদ্বিঘ্ন হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।

গত সোমবার রাত ১১টার দিকে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা থেকে গ্রেফতার করা হয় শিশু ধর্ষণ চেষ্টার আসামী হৃদয় আহমদ নামের এক কিশোরকে। সে কোম্পানীগঞ্জের তেলিখাল ইউনিয়নের চাতলপাড় গ্রামের বিল্লাল মিয়ার ছেলে। মামলার বরাত দিয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি কে এম নজরুল ইসলাম জানান, গত রবিবার সকালে দেড় বছরের শিশুসন্তানের চিকিৎসার জন্য চাতলপাড় গ্রামের এক দম্পতি গ্রাম্যচিকিৎসকের কাছে যান। এসময় বাড়িতে তাদের ৭ বছরের মেয়ে একা ছিল। সকাল ১০টার দিকে প্রতিবেশি হৃদয় আহমদ ফাঁকা ঘরে ওই শিশুটিকে একা পেয়ে ধর্ষনের চেষ্টা চালায়। ভাগ্যক্রমে ওই সময় পাশের ঘরের এক নারী এসে ঘটনাটি দেখতে পেলে হৃদয় পালিয়ে যায়। অভিযোগ পেয়ে সোমবার রাত ১১টার দিকে হৃদয়কে আটক করে পুলিশ।

এর আগে শনিবার রাতে নগরীর শামীমাবাদ আবাসিক এলাকার ৪নং রোডের পাঁচ সন্তানের এক জননী ধর্ষিত হন। একই রোডের দেলোয়ার হোসেন ঘরে ঢুকে তাকে ধর্ষন করে। এসময় ধর্ষনে সহযোগিতা করে আরও তিনজন। পরে ওই নারী ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি হন। রবিবার রাতে থানায় লিখিত অভিযোগ আসলে সাথে সাথে অভিযান চালিয়ে ধর্ষনের ঘটনায় অভিযুক্ত দেলোয়ার ও তার সহযোগী হারুনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দেলোয়ার নগরীর শামীমাবাদ আবাসিক এলাকার ৪ নম্বর রোডের ২নং বাসার দুইতলার ভাড়াটে।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর বেড়ানোর কথা বলে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর এক ছাত্রীকে নগরীর দাঁড়িয়াপাড়ার এক বাসায় এনে ধর্ষন করে মদন মোহন কলেজ ছাত্রলীগকর্মী রাকিব হোসেন নিজু। গত ২ অক্টোবর এ ঘটনায় ছাত্রীর মা বাদি হয়ে কোতোয়ালী থানায় মামলা দায়ের করেন। গত শনিবার সিলেটের মোগলাবাজার এলাকা থেকে রাকিব হোসেনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। রাকিব সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার জাউয়াবাজার এলাকার আবদুল কাইয়ূমের ছেলে। সে নগরীর দাঁড়িয়াপাড়ার একটি বাসায় ভাড়া থাকতো।

এর আগে গত ১৩ সেপ্টেম্বর শহরতলীর রায়েরগাঁও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে রায়েরগাঁও’র দুই যুবক। এ ঘটনায় মামলা হলে পুলিশ জালালাবাদ থানার রায়েরগাঁওয়ের নাসির উদ্দিনের ছেলে জসিম উদ্দিন ও একই এলাকার তজম্মুল আলীর ছেলে এখলাছ মিয়াকে গ্রেফতার করে। গতকাল মঙ্গলবার আদালত তাদের দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে।

একের পর এক ধর্ষনের মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনার জন্য রাজনৈতিক প্রভাব ও সামাজিক অবক্ষয়কে দায়ি করছেন সচেতন নাগরিকরা। সিলেট মুক্তিযুদ্ধ অনুশীলন কেন্দ্রের সভাপতি বিশিষ্ট সাংবাদিক আল আজাদ বলেন, রাজনৈতিক প্রভাবে কেউ কেউ অন্ধ হয়ে গেছে। ছোট ছোট অপরাধ করে রাজনৈতিক পরিচয়ে পার পেয়ে যাওয়ায় এখন তারা বড় অপরাধে বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে। এছাড়া এসব অপরাধ কর্মকান্ড বেড়ে যাওয়ার পেছনে সামাজিক অবক্ষয়ও দায়ি। এ অবস্থার উত্তরণ করা না গেলে ধর্ষণ কেন কোন ধরণের অপরাধই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (গণমাধ্যম) জ্যোর্তিময় সরকার জানান, ধর্ষকদের ব্যাপারে পুলিশ ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অবলম্বন করছে। কোথাও ধর্ষণের ঘটনার খবর পেলেই সাথে সাথে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

scroll to top