ঢাকা,৩০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

(সামাজিক শান্তি-সম্প্রীতি ও মীমাংসা) এম এইচ শাফী উদ্দীন

received_1084056282031374.jpeg

বিশ্বনাথ প্রতিনিধি হেলালুল ইসলাম হেলাল?সকলের কর্তব্য পরস্পরে মিলেমিশে ও ভাই-ভাই হয়ে চলার চেষ্টা করা.ঝগড়া-বিবাদ থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকা!
কিন্তু এ সত্ত্বেও দু’জনের মধ্যে
দুই গ্রুপ দুই গোত্রের মধ্যে কখনো বিবাদ সৃষ্টি হওয়া অসম্ভব নয়.বরং বিবাদ হতেও পারে!

কিন্তু তা অমীমাংসিতভাবে চলতে থাকা, সহিংসতা ও হানাহানির রূপ ধারণ করা বিরাট ক্ষতিকর!
এই ক্ষতি শুধু বিবাদরতদেরই নয়, গোটা সমাজের.এতে সমাজের উন্নতি-অগ্রগতি ব্যাহত হয়!
সামাজিক শান্তি-সম্প্রীতি বিনষ্ট হয় এবং সামষ্টিক প্রভাব-প্রতিপত্তি লোপ পায়!

তাই মুমিন দো মধ্যকার ঝগড়া মীমাংসা করে অতি দ্রুত এর উপর শান্তির শীতল প্রলেপ দিয়ে দেওয়া.আপোস-নিষ্পত্তি করে আবার মিলেমিশে চলতে শুরু করা ইসলামের সেই নীতিগুলো আমাদের মানা অবশ্যই কর্তব্য!
বিবাদ বা ঝগড়া মীমাংসা করার কুরআনুল কারীমের মূলনীতি সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হলো!
وَ اِنۡ طَآئِفَتٰنِ مِنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ اقۡتَتَلُوۡا فَاَصۡلِحُوۡا بَیۡنَہُمَا ۚ فَاِنۡۢ بَغَتۡ اِحۡدٰىہُمَا عَلَی الۡاُخۡرٰی فَقَاتِلُوا الَّتِیۡ تَبۡغِیۡ حَتّٰی تَفِیۡٓءَ اِلٰۤی اَمۡرِ اللّٰہِ ۚ فَاِنۡ فَآءَتۡ فَاَصۡلِحُوۡا بَیۡنَہُمَا بِالۡعَدۡلِ وَ اَقۡسِطُوۡا ؕ اِنَّ اللّٰہَ یُحِبُّ الۡمُقۡسِطِیۡنَ ﴿۹﴾
আর যদি মুমিনদের দু’দল যুদ্ধে লিপ্ত হয়, তাহলে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দাও!
অতঃপর যদি তাদের একদল অপর দলের উপর বাড়াবাড়ি করে, তাহলে যে দলটি বাড়াবাড়ি করবে, তার বিরুদ্ধে তোমরা যুদ্ধ কর, যতক্ষণ না সে দলটি আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে.তারপর যদি দলটি ফিরে আসে তাহলে তাদের মধ্যে ইনসাফের সাথে মীমাংসা কর এবং ন্যায়বিচার কর.নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়বিচারকারীদের ভালবাসেন.হুজরাত (৯)

اِنَّمَا الۡمُؤۡمِنُوۡنَ اِخۡوَۃٌ فَاَصۡلِحُوۡا بَیۡنَ اَخَوَیۡکُمۡ وَ اتَّقُوا اللّٰہَ لَعَلَّکُمۡ تُرۡحَمُوۡنَ ﴿۱۰﴾
নিশ্চয় মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই!
কাজেই তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে আপোষ- মীমাংসা করে দাও!
আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, আশা করা যায় তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হবে.হুজরাত (১০)

সামাজিক বিচারকমণ্ডলীগণ যদি কোরআনের সেই নীতি অনুসরণ করে বিচার করে আশা করি বিবাদ যত বড় হয় না কেন মীমাংসা বা সমাধান হবেই ইনশাআল্লাহ!
নবী কারীম সাঃ বলছেন.
الْمُسْلِمُونَ كَرَجُلٍ وَاحِدٍ، إِنِ اشْتَكَى عَيْنُهُ، اشْتَكَى كُلُّهُ، وَإِنِ اشْتَكَى، رَأْسُهُ اشْتَكَى كُلُّهُ.
মুসলিম সকলে মিলে একটি সত্তার মত, যার চোখে ব্যথা হলে গোটা দেহের কষ্ট হয়. মাথা ব্যথা হলে গোটা দেহের ব্যথা হয়!
-সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৫৮৬
যিনি ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করে সুষ্ঠু বিচার করবেন.তার সম্পর্ক অনেক ফজলিত এসেছে সে আলোকে একটি হাদীস বুখারী মুসলিম শরীফ থেকে নিম্নে!
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى الله ُعَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ اللهُ فِي ظِلِّهِ يَوْمَ لَا ظِلَّ إلَّا ظِلُّهُ: إمَامٌ عَادِلٌ، وَشَابٌّ نَشَأَ فِيْ عِبَادَةِ اللهِ، وَرَجُلٌ قَلْبُهُ مُعَلَّقٌ فِيْ المَسَاجِدِ، وَرَجُلَانِ تَحَابَّا فِيْ اللهِ اجْتَمَعَا عَلَيْهِ وَتَفَرَّقَا عَلَيْهِ، وَرَجُلٌ دَعَتْهُ امْرَأَةٌ ذَاتَ مَنْصَبٍ وَجَمَالٍ فَقَالَ : إنِّي أخَافُ اللهَ، وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ فَأَخْفَاهَا حَتَّى لَا تَعْلَمَ شِمَالُهُ مَا تُنْفِقُ يَمِيْنُهُ، وَرَجُلٌ ذَكَرَ اللهَ خَالِيًا فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ) متفق عليه
আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেছেনকেয়ামত দিবসে সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা তার আরশের ছায়াতলে আশ্রয় দেবেন, যেদিন তার ছায়া ব্যতীত ভিন্ন কোন ছায়া থাকবে নান্যয়পরায়ন বাদশাহ ; এমন যুবক, যে তার যৌবন ব্যয় করেছে আল্লাহর এবাদতে ; ঐ ব্যক্তি যার হৃদয় সর্বদা সংশ্লিষ্ট থাকে মসজিদের সাথে ; এমন দু ব্যক্তি, যারা আল্লাহর জন্য একে অপরকে ভালোবেসেছে, এবং বিচ্ছিন্ন হয়েছে তারই জন্য ; এমন ব্যক্তি, যাকে কোন সুন্দরী নেতৃস্থানীয়া রমণী আহ্বান করল অশ্লীল কর্মের প্রতি, এবং প্রত্যাখ্যান করে সে বলল, আমি আল্লাহকে ভয় করি ; এমন ব্যক্তি, যে এরূপ গোপনে দান করে যে, তার বাম হাত ডান হাতের দান সম্পর্কে অবগত হয় না!
আর এমন ব্যক্তি, নির্জনে যে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তার দুচোখ বেয়ে বয়ে যায় অশ্র“ধারা!
কোরআন সুন্নাহের অনুসরণে সমাজের বিচারব্যবস্থা যেন হয় এই কামনা করি আল্লাহর কাছে. এবং আমরা সবাই কুরআন সুন্নাহের আলোকে সমাজকে আলোকিত করার চেষ্টা করি আশা করি সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে ইনশাআল্লাহ!
তিনটি আইনের সমন্বয়ে দেশ বা সমাজ পরিচালিত হয়
১. আদালত বা রাষ্ট্রীয় আইন
২. ধর্মীয় বা ইসলামের আইন
৩. সমাজের আইন বা গ্রাম্য সালিশদারের মাধ্যমে মীমাংসা!
সর্বোত্তম সুন্দর ব্যবস্থা হচ্ছে ধর্মীয় বা ইসলামী আইন আমরা চেষ্টা করব ধর্মীয় আইন দিয়ে বিবাদ মীমাংসা করার. আর সেটাই সর্বোত্তম পন্থা.তবে সামাজিক রাষ্ট্রীয় আইনকেও আমরা শ্রদ্ধা করা উচিত!

মীমাংসার ক্ষেত্রে ইসলাম যে মূলনীতি বর্ণনা করেছেন তার অনুসরণ করলে অবশ্যই সব সমস্যার সমাধান সম্ভব ইসলামকে ফলো করে বিচার ব্যবস্থা করা সবার প্রতি বিনীত.প্রতিটা সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠিত যেন হয় সেই কামনা করি.আল্লাহ হাফেজ!

লেখকঃ ইসলামিক গবেষক হাফেজ মাওলানা শাফী উদ্দীন
বন্ধুয়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ বিশ্বনাথ সিলেট

Leave a Reply

Your email address will not be published.

scroll to top