সাহেদ আহমদ ঃ দৈনিক সিলেটের ডাক-এর সাবেক সফল সম্পাদক, দেশ বরেণ্য শিক্ষানুরাগী, মানবতার কল্যাণে নিবেদিত প্রাণ ব্যক্তিত্ব মহীয়সী নারী বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরীর ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী শনিবার পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে দৈনিক সিলেটের ডাক কার্যালয়ে এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
বছর ঘুরে আবার ফিরে এসেছে শোকাবহ সেই দিন। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার প্রিয় সমাজ হিতৈষী বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী ২০০৬ সালের এই দিনে পৃথিবীর সকল মায়া ছিন্ন করে দেশ-বিদেশের অগণিত ভক্ত অনুরাগীকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে চির বিদায় নিয়েছিলেন। অত্যন্ত পরোপকারী ও সমাজসেবী, বৃহত্তর সিলেটের বহুল প্রচারিত দৈনিক সিলেটের ডাক’র সাবেক সফল সম্পাদক বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরীর অকালে চলে যাওয়াটা ছিলো বিরাট এক বেদনার।
তিনি দেশ, সমাজ ও আর্তমানবতার কল্যাণে অনেক কিছু করে গেছেন। জীবন সঙ্গী সমাজসেবাম‚লক অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান দানবীর ড. রাগীব আলীর সাথে সমাজসেবার ব্রত নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের বিভিন্ন প্রান্তে।
তিনি ছিলেন দানবীর ড. রাগীব আলীর মানবকল্যাণমূলক কাজের অনুপ্রেরণা। কিন্তু,আজ ১৪টি বছর তিনি নেই। তবে তিনি বেঁচে আছেন তাঁর মহৎ কাজের জন্য। সমাজসেবামূলক অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন মানুষের হৃদয়ে।
মৃত্যু তাঁকে ছিনিয়ে নিয়ে গেলেও তাঁর আদর্শ কখনো মরেনি। মানুষের মনে এখনো তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন। যতদিন তাঁর কর্ম থাকবে, ততদিন মানুষ তাকে অনুভব করবে। দেশবরেণ্য শিল্পপতি ও শিক্ষানুরাগী দানবীর ড.রাগীব আলীর সকল ভালো কাজের পেছনে ছায়াসঙ্গী ছিলেন বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী। তিনি ছিলেন আপাদমস্তক একজন পরোপকারী। এদেশের গরিব দু:খী মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে আমৃত্যু সংগ্রাম করে গেছেন তিনি।
যারা সমাজ এবং রাষ্ট্রের জন্য কাজ করেন-তাদেরকে মৃত্যুর পরও মনে রাখে মানুষ। তেমনি এক বৃহৎ হৃদয়ের মানুষ বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী। তাঁর মেধা মননে সবসময় ছিলো স্বদেশপ্রেম। দেশের পিছিয়ে পড়া বৃহৎ জনগোষ্ঠীর শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থানের বিষয়টি সারাক্ষণ আচ্ছন্ন করে রাখতো তাঁকে। দেশের সকল মেহনতি মানুষের মুখে হাসি ফুটুক-এমন স্বপ্ন ছিলো এই আলোকিত নারীর সমস্ত জীবন জুড়ে। তাঁর অনেক সুমহান কীর্তি শুধু সিলেটে নয়, বাংলাদেশের প্রত্যন্ত জনপদেও ছড়িয়ে রয়েছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রশংসিত সিলেটের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় লিডিং ইউনিভার্সিটি এবং সিলেট বিভাগের প্রথম বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় দানবীর ড. রাগীব আলীর পাশাপাশি বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরীর রয়েছে অনন্য অবদান। এজন্য মানুষ তাঁকে এখনো শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন, অন্তর দিয়ে ভালোবাসেন। প্রতিবছর মৃত্যুবার্ষিকী অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ধনী-গরিব সকল শ্রেণিপেশার মানুষের দীর্ঘ সারি যেন সেটিই প্রতীয়মান হয়।
দৈনিক সিলেটের ডাক সম্পাদনার মহান দায়িত্ব পালন করে ঐতিহ্যবাহী জনপদ সিলেট অঞ্চলের সংবাদপত্রে তিনি যোগ করেন এক নতুন মাত্রা। শুধু তাই নয়, তাঁর যোগ্য নেতৃত্বে উপকৃত হয়েছেন এদেশের অগণিত মানুষ। সকল প্রকার সহযোগিতা লাভ করেছেন বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন। গুণগত শিক্ষা প্রসারের ক্ষেত্রেও তাঁর রয়েছে অবিস্মরণীয় অবদান। নিজ হাতে গড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো নিভৃতে শিক্ষিত সমাজ গঠনে নিরবধি কাজ করে যাচ্ছে। বলা যায়, মানবকল্যাণে নিবেদিত তার হাতেগড়া প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই সমাজের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে।
বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী ২০০৬ সালের ১২ ডিসেম্বর ভোর রাতে আকস্মিক হৃদরোগে আক্রান্ত হন। পরে তাঁকে মালনীছড়া চা বাগানের বাংলো থেকে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁরই হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। সেখানে নিয়ে আসার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তারপর সিলেটের সর্বস্তরের মানুষের চোখের জল আর ফুলেল শ্রদ্ধায় ওই দিন বিকেলে তাঁকে দাফন করা হয় স্বামী দানবীর ড. রাগীব আলীর গ্রামের বাড়ি শহরতলীর কামালবাজারস্থ রাগীব নগরের পারিবারিক গোরস্থানে। বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরীর ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সিলেটের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন ছাড়াও তারই প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, ডিগ্রি কলেজ, স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। তবে কোভিড-১৯ করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এসব কর্মসূচি পালিত হবে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে-স্মরণ সভা, আলোচনা সভা, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল। এছাড়া, মরহুমার পরিবার আত্মীয়-স্বজনের উদ্যোগেও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে। শনিবার সকালে শহরতলীর কামালবাজাস্থ রাগীবনগরে মরহুমার কবরে ফাতেহা পাঠ ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে।