বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের অ্যাডভোকেট তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষা চলাকালীন সময় ‘কঠিন প্রশ্নের’ অযুজাতে পরীক্ষা কেন্দ্রে হামলা ও ভাংচুরের অভিযোগে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তারেক উদ্দিন তাজকে গ্রেপ্তার করেছে নিউ মার্কেট থানা পুলিশ।
এ ঘটনায় তারেক উদ্দিন তাজকে প্রধান আসামি করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের নিউমার্কেট থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তারেক উদ্দিন তাজ নগরীর ঘাসিটুলা এলাকার আলাউদ্দিনের পুত্র। তিনি সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মিডিয়া, প্রশাসন ও জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
এদিকে রোববার (২০ ডিসেম্বর) গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে হাজির করে পুলিশ সাত দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত তারেক উদ্দিন তাজসহ ১২ আসামিকে ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
বিষয়টি সিলেট ভয়েসকে নিশ্চিত করেছেন রাজধানীর নিউ মার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম কাইয়ুম।
ওসি আরও জানান- এ ঘটনায় ৩টি মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে তারেক উদ্দিন তাজ একটি মামলায় এজহারনামিয় ১ম আসামি। বাকি দুই মামলাতেও তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে।
এদিকে এ ব্যাপারে সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার নসরত আফজা চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সিলেট ভয়েসকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি প্রথম জানলাম। এ বিষয়ে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করতে হবে। তাছাড়া এখন উনি আমাদের এখানে নিয়মিত না। আমাদের ভিসি স্যার আছেন, ট্রাস্টি বোর্ড আছে উনাদের সাথে ব্যাপারটি নিয়ে আলোচনা করতে হবে।’
একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ একটি পদে থেকে সরকারের এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি পরীক্ষায় উনি যে কাজ করেছেন তাতে তরুণ প্রজন্ম কি শিখবে এবং এই অপরাধে তার প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কি পদক্ষেপ নেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি সম্মান রেখে প্রাতিষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। যেহেতু বিষয়টি মাত্র জানলাম তাই এখনই আমি বেশি কিছু বলতে পারছি না।
প্রসঙ্গত, শনিবার সকাল ৯টা থেকে ঢাকার ৯টি কেন্দ্রে প্রায় ১৩ হাজার পরীক্ষার্থী আইনজীবী তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন। কিন্তু প্রশ্নপত্র হাতে পাওয়ার পর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন পরীক্ষার্থীরা। অনেকে পরীক্ষা বর্জন করে কেন্দ্র থেকে বের হয়ে যান। শিক্ষার্থীদের দাবি, এবারের প্রশ্নপত্র অনেক ‘কঠিন’ হয়েছে। পাশাপাশি পরীক্ষায় সিলেবাসের বাইর থেকে প্রশ্ন এসেছে। এতে ১০ শতাংশ পরীক্ষার্থীও পাস করবে না।
এসব অভিযোগে পুরান ঢাকার মহানগর মহিলা কলেজ কেন্দ্র, মোহাম্মদপুর সরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজ ও বিসিএসআইআর হাইস্কুলে ভাঙচুর চালানো হয়।
সাধারণ শিক্ষার্থীরদের অভিযোগ, বার কাউন্সিলের লিখিত পরীক্ষা বাতিল করে শুধু মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে সনদের দাবিতে আগে থেকেই একদল পরীক্ষার্থী আন্দোলন করছিল। তারাই এই হামলা করেছে বলে পরীক্ষায় অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা জানান।তবে তাদের সঙ্গে কিছু পরীক্ষার্থীও যোগ দিয়েছেন।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে আইনজীবীদের সনদ পেতে নৈর্ব্যক্তি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। আবার ওই তিন ধাপের যেকোনো একটি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা একবার উত্তীর্ণ হলে পরবর্তী পরীক্ষায় তারা দ্বিতীয় ও শেষবারের মতো অংশগ্রহণের সুযোগ পান। তবে দ্বিতীয়বারেও অনুত্তীর্ণ হলে তাদের পুনরায় শুরু থেকেই পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়।
সে অনুসারে ২০১৭ সালের ৩৪ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে থেকে লিখিত পরীক্ষায় দ্বিতীয় ও শেষবারের মতো বাদ পড়া তিন হাজার ৫৯০ জন শিক্ষার্থী এবং ২০২০ সালে প্রায় ৭০ হাজার শিক্ষানবিশ আইনজীবীর মধ্যে নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ আট হাজার ৭৬৪ শিক্ষার্থী মোট ১২ হাজার ৮৫৮ জন সনদপ্রত্যাশী এবার লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছেন।