ঢাকা,৭ই জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ইবনে ছানাওরের সংক্ষিপ্ত জীবনী——সুহেল আহমদ

received_181793356681094.jpeg

কবি আজাদ ইবনে ছানাওর [মোঃ মতিউর রহমান দাউদপুরী] তিনি একাদ্বারে একজন কবি, ছড়াকার, গীতিকার, হাফেজ ও ক্বারী, শুধু তাই নয়-তিনি সুললিত কণ্ঠের শিল্পীও বটে। কবির পিতা ক্বারী ছানাওর আলী [সোনামেয়াছাব] এবং মাতা আমিরুন-নেসা।
সিলেট জেলার দক্ষিণ সুরমা উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ৯ নং দাউদপুর ইউনিয়নের দাউদপুর [গাংপার] গ্রামে ১৯৭৯ সালের ৫ই অক্টোবরে জন্মগ্রহণ করেন।

বাবা মায়ের দ্বিতীয় সন্তান হিসেবে কোন অভাববোধ করেননি জীবনে। প্রজাপতির সৌন্দর্যের মত গ্রামেই বেড়ে উঠেন হেসে খেলে। ছোটবেলা কেটেছে খুবই দূরন্তপনায়। মা বাবার ভালবাসা ও প্রকৃতির অবারিত দানে কবি দেখতে থাকেন এক অনিন্দ্য সুন্দর জীবনের স্বপ্ন, যা সবার উপকারে আসবে। সমাজকে আলোকিত করবে, বাঁচার মত বাঁচতে শেখাবে গোটাজাতিকে। এমন কিছু মাথায় রেখেই তাঁর পথচলা। একসময় তাঁর চিন্তা চেতনায় স্থান করে নেয় ভাবালুতা; কাব্যিকতা। তাঁর ধারণা “সুশিক্ষাই পারে একটি জাতি তথা গোটাবিশ্বকে সুস্থভাবে বাঁচার পথ দেখাতে”। তাই তাঁর জীবনকে সাহিত্যচর্চায় নিয়োজিত করেন।

শৈশব থেকেই কবি সবুজ ও প্রাকৃতিকপ্রেমী।
শাহজালালের পুণ্য ভুমি সিলেটের আনাচেকানাচে তাঁর মন ছুটে বেড়ায়। যেখানে সবুজ সেখানেই প্রকৃত প্রেম খুঁজতে হারিয়ে যান তিনি । প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে কাজ করছেন নিরলসভাবে। কবি স্রষ্টার সুনিপুণ সৃষ্টির মাঝে খুঁজে পান প্রেম ও ভালোবাসা। এমন নিখাঁদ সৃষ্টির স্রষ্টা না জানি কত পাক! কত না পবিত্র! কত না সুন্দর! ভাবেন এগুলো কীভাবে লিখনীর মাধ্যমে তুলে ধরবেন….
এভাবেই কবিতার জন্ম নেয় তাঁর মনে। আজ অবধি তা লিখে চলেছেন মনের আনন্দে, সকলের ভালোর জন্য।

ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন একজন প্রবাসী। প্রবাসের অশান্তিপূর্ণ জীবন থাকা সত্বেও নিজেকে সাহিত্যচর্চার সাথে যুক্ত করে সমাজের উন্নতির জন্য কবিতা, ছড়া ইত্যাদি লিখে প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন প্রতিদিন। পেয়েছেন অগণিত সম্মাননাসনদ ও ক্রেস্ট পুরষ্কার।

কবিতার উপর গবেষণা করে তিনি নতুন একটা ছন্দকাঠামো সৃষ্টি করেন, যার নামকরণ “আজাদীয় কবিতা”। বর্তমান বাংলার ছন্দবিশারদ, গবেষক ও কবি “কালাচাঁদ মৃত্যু” কবি আজাদ ইবনে ছানাওরের ছন্দশিক্ষক। তিনি আজাদ ইবনে ছানাওরের উদ্ভাবিত ছন্দকাঠামোকে দেখেন এবং চিরনি-যাচাই করে স্বীকৃতি দেন, ঠিক তখনই বাংলা ও ভারতবর্ষের অনেক গুণী কবি ও গবেষকগণও সহমত প্রকাশ করে স্বীকৃতি দেন। তন্মধ্যে ভারববর্ষের বিশেষ ব্যক্তিত্ব কবি রঞ্জনকুমার সরখেল দাদা, শ্রদ্ধেও কবি শামসুজ্জামান আশরাফী, কবি গাজী আজিজুল হক, কবি ভিবা গুপ্ত, কবি মরিয়ম শ্রাবণী, কবি ওয়াহিদা খাতুন অন্যতম। নবপ্রজন্মের জন্য নতুন নতুন আইডিয়া দিয়ে শিক্ষা তথা সমাজ ব্যবস্থাকে নতুনরূপে সাজাতে তাঁর এ প্রচেষ্টা।

কবি’র কবিতা লেখার প্রথম উৎসাহদাতা জনাব কবি এম এ হালিম স্যারসহ অসংখ্য অগণিত কবিবন্ধুগণ।
তাঁরপর প্রথমে ছন্দ শেখান শ্রদ্ধেও কবি আলী এরশাদ সহ অনেক ছন্দজ্ঞান সম্পন্ন প্রিয়জনেরা।
পুরোপুরিভাবে ছন্দ শিখিয়ে এপর্যন্ত নিয়ে আসেন কাজী মন্টু কলেজের বিভাগীয় প্রধান, প্রভাষক, গবেষক, গীতিকার, “চেতনার বাণ” কাব্যগ্রন্থের প্রণেতা ও ম্রৈত্যুয়িকী ছন্দের উদ্ভাবক কবি কালাচাঁদ মৃত্যু স্যার। বিশেষ করে কবি নুর হোসেন ভাই-এর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন যে, নুর হোসেন ভাইও কঠোর শ্রম দিয়েছেন। সমস্ত গুণীজনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।

কবি এই মুসাফিরি জীবনকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছেন তাই তাঁর কাছে সময়ের মূল্য অপরিসীম। তিনি বলেন, স্রষ্টা মানুষকে শ্রেষ্ঠ জাতি তথা “আশরাফুল মাখলুকাত” হিসেবে পাঠিয়েছেন। মানুষ মানবিক দায়িত্ব পালন করবে এই ক্ষণিক পৃথিবীতে। মহান আল্লাহতালা বলছেন– জ্বীন ও ইনসানকে আমার ইবাদত করার জন্যই পৃথিবীতে প্রেরণ করেছি। এই কথা মাথায় রেখেই ইবাদতের উদ্দেশ্যে কবি তাঁর নিরলস কলমদ্বারা লিখে চলেছেন নতুন নতুন ছড়া, কবিতা, হামদ্ ও নাত-ই-রাসুল [সাঃ]।

সহজসরল জীবনযাপনের কবি আজাদ ইবনে ছানাওরের মা বোন, দুই ছেলেমেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে বর্তমানে ৩৬০ আউলিয়ার পুণ্যভূমি সিলেটের ঐতিহ্যবাহী দাউদপুর গ্রাম অর্থাৎ আপন গ্রামেই বসবাস করছেন।

বর্তমান প্রেক্ষাপটের কঠোরতার ভেতর দিয়ে বেড়ে উঠা এই কবি একজন কালজয়ী মানুষ হবার স্বপ্ন দেখেন। সকলের জন্য সুন্দর ও সুস্থ সুনিপুণ জীবনযাপন কামনা করেন।
স্বপ্ন দেখেন, কল্যাণধর্মী লেখালেখি করার, যা দুনিয়ার শান্তি ও আখেরাতের মুক্তির পথ হবে। তিনি মানুষের কাছে, ইতিহাসের কাছে অমরত্ব লাভ করতে চান সমাজের উপকার করে। কবি’র লেখায় আছে শক্তি, আছে সাহস। লেখার সৌন্দর্যের জন্য আছে নিত্যনতুন ছন্দ-আনন্দ। শুধু তাই নয়, আজাদ ইবনে ছানাওরের লেখায় বেশিরভাগই শিক্ষনীয় বিষয় পাওয়া যায়। তাঁর একেকটা শিশুতোষ যেন নবপ্রজন্মের একেকটি পাঠশালা। শব্দ প্রয়োগে তিনি আপোষহীন। তাঁর কয়েকটি কবিতা ইংরেজিতেও অনুবাদ করেছেন কবি, গীতিকার ও প্রফেসর ড. নজরুল হাবিবি স্যার। কবি মরিয়ম শ্রাবণীও একটি কবিতা ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন। আরও একটি কবিতা ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন- সেরা অনলাইন-পাঠক জনাব জাকির হোসেন।

কবি’র প্রকাশিত গজল-পুস্তিকা ১টি
☞বিজয় নিশান।

তাঁর যৌথকাব্যগ্রন্থ সমূহ:-
#স্থানীয় পত্রিকা=
/সিলেটের ডাক/
/দৈনিক সিলেট বাণী/
#জাতীয় পত্রিকা= “বাংলাবাজার”সহ-
/মাসিক পরওয়ানা/
/মাসিক কাবার পথে/
/মাসিক মারজান/
/মাসিক মরুর আলো/
/মাসিক সুরেশ্বর/
/মাসিক বাসিয়া/
(বাৎসরিক= অলঙ্কার/ সহ আরো অনেক মাসিক, বাৎসরিক পত্রিকায় লেখা ছাপা হয়েছে।

#যৌথকাব্যগ্রন্থঃ –
১/পল্লীপাতা ছড়াগ্রন্থ/
২/ভারত থেকে প্রকাশিত “বই ঘর বার্তা” সাহিত্য পত্রিকা /
৩/কবিতার ভূবন=শারদ সংখ্যা/
৪/স্বাধীন বাংলা সাহিত্য ম্যাগাজিন/
৫/একুশ আমার অহংকার/
৬/কাব্যতরী
৭/ বিজয়ের উল্লাস”সহ আরো অনেক যৌথকাব্যগ্রন্থ।

প্রকাশের অপেক্ষায় আছে আরো কয়েকটি গজল, গান ও কাব্যগ্রন্থ। কবি সকলের দোয়া এবং আশীর্বাদ কামনা করেন।

লেখকঃ সম্পাদক, মাসিক দক্ষিণ সুরমা দর্পণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

scroll to top