ক্ষমতা নয় জনতার রাজনীতি করেছিলেন বৃহত্তর জৈন্তিয়া মায়ের গর্বিত গোয়াইনঘাট কৃতি সন্তান জননেতা দিলদার হোসেন সেলিম(এমপি)।কথায় আছে’কীর্তি মানের মৃত্যু নেই’সেই কীর্তিমান মহান পুরুষ সেলিম ভাই।আবাল বৃদ্ধ বনিতার হৃদয়ের নয়ন মনি,জনতার উন্নয়ন পাগল সেলিম।
ম্যান ইজ মর্টাল।প্রত্যক মানুষ মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতেই হবে।এটা থেকে কেউই রেহাই পাবে না নিশ্চিত। ইউনিভার্সসল ট্রু।জন্মিলেই মরতে হবে।আমরা সাবাই এ পথের যাত্রী।হয় তো কেউ আগে কেউ পরে।এই আর কী।
পান,পানি,নারী এই তিনে মিলে আমরা জৈন্তাপুরী।এই উক্তিটি সেই দূর থেকেই শুনা যেতো মাইকের শব্দে সেলিম ভাইয়ের মিষ্ঠি কন্ঠে।মহান জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে এ কথা অনেকবার উচ্চারণ করেছেন।বৃহত্তর জৈন্তিয়াকে রিপ্রেজেন্ট করার নিমিত্তে।তাঁর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন ও সামাজিক অঙ্গনে সবর পদচারণা।একজন সফল রাজনীতিবিদ।
দিলদার হোসেন সেলিম একজন আপাদমস্তক রাজনৈতিবিদ।আমৃত্যু রাজনীতি করেগেছেন জনতার।এজন্য জনতার ভালোবাসাও পেয়েছেন তৃপ্তিভরে।রাজনীতি যার যার জনতা ও সমাজ,রাষ্ট্র সবার।এটা যে সত্য তিনি প্রমান করলেন আবারও।রাজনীতিতে দলমত থাকতে পারে কিন্তু দল মতের উর্ধে থেকে কাজ করেছেন জনতার এই নেতা।
মতাদর্শের বাহিরে ব্যাক্তিত্বের মাপকাঠিতে একজন সাবলীল মানুষ।মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীকছিলেন।একজন মিশুক প্রকৃতির মানুষছিলেন।রাজনীতির উর্ধে উঠে সামাজিক অঙ্গনে কাজ করেছেন নিরলস ভাবে।
তৃণমূল থেকে বেড়ে ওঠা এক সময়ের তুখু্ঁড় সাহসী ছাত্রনেতা থেকে জাতীয় নেতা এবং অবশেষে জনপ্রতিনিধি।এলাকার জন্য কাজ করেছেন দল মতের তুক্কা না করে।ভালো ভেসেছেন জনগণ কে।এ জন্য সর্বমলে সেলিম ভাই একনামে পরিচিত সমাদৃত।
ছাত্র রাজনীতি হাতেখড়ি পড়ালেখা ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজের সবুজ ক্যাম্পাস চত্বর থেকে।এমসি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়”ছাত্র সংসদ”এর ছাত্রপ্রতিনিধি সাধারণ সম্পাদক (জি.এস)স্বাধীনতার পূর্বে।
।পরে সহ সভাপতি(ভি.পি)ছাত্রদের ভোটে নির্বাচিত হোন(স্বাধীনতার পরে।এই রাজনৈতিক জার্নি শুরু।থেমে থাকেন নি কখনও।
সামাজিক কাজে ছিলেন বিরল।খেলাধূলা পছন্দ করতেন। ক্রিড়ামোদি ব্যক্তিত্ব,সিলেট ক্রিড়া সংস্থার একাধিক বারের নির্বাচিত সাধারণত সম্পাদক,রেডক্রিসেন্টের সাধারণ সম্পাদকেরও গুরুদায়িত্ব সফলতার সহিত পালন করেন।রেডক্রস- সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও বিচরণ ছিল।
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া সংগঠন,বাংলাদেশের সব চেয়ে জনপ্রিয় দল”বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)র সিলেট জেলার সিনিয়র সহ সভাপতি,পরে জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব অত্যান্ত নিষ্টার সাথে পালন করেছেন।
বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় ইস্যুতে ছিলেন তৎপর।রাজপথের রাজনীতিতে ছিলেন অগ্রসৈনিক।রাজপথে দাঁড়িয়েছিলেন জনগণের কল্যাণে,অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে। স্থানীয় ইস্যু সীমান্ত রক্ষা ও সীমান্তবাসীর দাবী আদায়ের জন্য “আমরা সীমান্তবাসী”সামাজিক সংগঠন গড়ে তুলেন।আহবায়কের দায়িত্বে ছিলেন সীমান্তবাসীর এ নেতা।
ইলিয়াস মুক্তি সংগ্রাম আন্দোলন,টিঁপাইমুখ বাঁধ,ফারাক্কা বাঁধ আন্দোলন সহ জনগণের দাবী দাওয়া আদায়ে সক্রিয় থেকে নেতৃত্ব,সু-মিষ্ঠ,ধরাজ কন্ঠে গুছিয়ে সভা সমাবেশ মাতিয়ে তুলতেন প্রতিনিয়ত বক্তব্যে।দলীয় সভা সমাবেশ ও আন্দোলনে ছিলেন রাজপথের প্রাণভোমরা।চরম অগ্নিঝরা প্রতিবাদী বক্তব্যে মানুষের হৃদয়ে নাড়া দিত।হা—!করে মানুষ শুনত।ওতপেতে থাকত কখন সেলিম ভাই বক্তব্য দিবেন।
গণতন্ত্র রক্ষা ও জনগণের অধিকার আদায়ে আমৃত্যু লড়াই করেছেন তিনি।রাজপথে আন্দোলনের জন্য কারাবরণ করতে হয় বারবার।জেল জুলুম হুলিয়া,হামলা মামলা মুকদ্দমা ছিল আমৃত্যু।নির্যাতনের শিকার হন।হাসিমুখে বরণ করে নেন এ ত্যাগি নেতা।কর্মীদের মূল্যায়ন করতেন,কখন কর্মীদের রেখে মাঠ ছাড়তেন না।আগলে রাখতেন সন্তানের মতো।
এর পরে চলে আসেন গণমানুষের রাজনীতিতে।”জাহাজ” প্রতীক নিয়ে বিপুল ভোটে গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
সময়ের তাড়নায় জনগণের চাহিদা পূরণেরন জন্য জাতীয় নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেন (স্বতন্ত্র প্রার্থী) হিসেবে “পদ্মফুল”প্রতীক নিয়ে।
সিলেট ০৪ আসনের হ্যাভিয়েট প্রার্থী মরহুম এম সাইফুর রহমান ও ইমরান আহমদের সাথে টক্কর দিয়ে হেরে যান।কিন্তু তিনি হেরে গিয়েও থেমে থকেন নি।ছুটে চলেছেন মাঠে-ঘাটে পথে-প্রান্তরে।কাজ করে যান জনগণের তরে।মানুষের কল্যাণে।কথায় আছে জনগণের জন্য কাজ করে যাও একদিন জনগণ নেতা তৈরী করবে।
জাতীয় নির্বাচন চলে আসে।অংশগ্রহণ করেন।২০০১সালের নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নে বিপুল ভোটে এম.পি নির্বাচিত হোন।শুরু হয় উন্নয়নমূলক কাজ।কাজের মাধ্যমে
জৈন্তা,গোয়াইনঘাট,কোম্পানীগঞ্জ এর মানুষের কাছে সেলিম ভাই একনামে পরিচিত হয়ে ওঠেন
।মানুষের আস্থা,বিশ্বাস ও ভালোবাসার মানুষ হয়ে জনগণের হৃদয়ে স্থান করে নেন।থাকবেন অনন্তকাল।
প্রিয়নতা আজ আর আমাদের মাঝে নেই।চিরকালের জন্য চলেগেছেন না ফেরার দেশে।৫মে ২১খ্রিঃ,রাত ৯.৫০মিনিটের সময় বুধবার( ২৩ রমজানের বিজোড় রাতে) সিলেটের মাউন্ড এডোরা হাসপাতালে(নয়া সড়ক)।তিনি দীর্ঘদিন ধরে (প্যালাইস)অসুস্থ ছিলেন।তিনি প্রায়ই বলতেন” মৃত্যু অনিবার্য,বেঁচে থাকা দুর্ঘটনা”
মাওলা সবার প্রিয় সেলিম ভাইয়ের ভুল ক্রুটি ক্ষমা করে জান্নাত দান করুন,এই কামনা করি।
সিলেটের মানুষ হারালো একজন নেতা,অভিভাবক,রাজনৈতিক দল হারালো মাঠে-ময়দানের নেতাকে। আমরা হারালাম আমাদের প্রিয়নেতা দিলদার হোসেন সেলিম ভাই কে।ওপারে ভালো থেক,সুখে ঘুমাও।
উন্নয়ন পাগল এ নেতা নির্বাচনি আসনে পাঁচ বছরে শাসনামলে শিক্ষা,চিকিৎসা সহ অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড করেছেন।
আমি তার মধ্য থেকে দুটির কথা তুলে ধরছি।গোয়াইনঘাটের ৯নং ডৌবাড়ী ইউনিয়নের” কাপনা নদীর উপর দেড়শত মিটারের মধ্যে দুটি ব্রিজ নির্মাণের কথা বলছি।যা অত্যান্ত কঠিন কাজ ছিল।জনগণের দাবীর পেক্ষিতে করেছেন।এই ব্রিজের জন্য সংসদে কৈফিয়ত দিতে হয়েছে তাঁকে।একটি মানিকগঞ্জ টু লংপুর ডৌবাড়ী রোড এবং অপরটি মানিকগঞ্জ টু হাটগ্রাম হয়ে হাকুর বাজার রোড।আারেকটি আমাদের গ্রামের রাস্তা(লামা ফতেপুর)।এ ব্রিজ দুটি ও আমাদের গ্রামের রাস্তা তিনি যদি না করে দিতেন তাহলে আমার মনে হয় এগুলি হয় তো আর হতো না।দুঃখ থেকে যেত মানুষের মনে।এভাবে ঢেলে সাজিয়ে ছিলেন এলাকার উন্নয়ন।এ কারণে তিনি এ আসনের উন্নয়নের রূপকার হিসেবে স্বীকৃতি।
প্রিয়নেতা তাঁর
কর্মেই স্মরণ রাখবে মানুষ।বেচেঁ থাকবেন মানুষের হৃদয়ের মনি কোটায়।
আবকাঠামোগত উন্নয়ন শিক্ষা চিকিৎসা সহ সর্ব সেক্টরে ভূমিকা রেখেছেন অনন্য।
গত এক বছরে (২০-২১ সনে)দেশ। ম।হারালো একে একে করে অনেক নেতাকে।শূন্যতা সৃষ্টি হচ্ছে এসব জায়গায়,প্রবীণ রাজনীতিবিদদের বিয়োগে।
প্রিয়নেতা কে মানুষ কত ভালোবাস তো তাঁর বহিঃপ্রকাশ নামাজে জানায।
বৈশ্বিক মহামারী করুনাভাইরাসের মধ্যে যখন মানুষ নিজের বাবা,মা ভাই ও আত্মীয়স্বজনদের লাশ ছুঁয় না,ধরে না,পাশে থাকে না,ঠিক তখনই প্রিয়নেতাকে শেষ বিদায় জানাতে লক্ষ লক্ষ মানুষের ঢল।হাজার হাজার মানুষের আকুতি।আহ!চলে গেলেন সেলিম এমপি!আস্রুসিক্ত নয়নে জনতার নেতাকে শেষ বিদায় জানালো।কতটা জনপ্রিয়তা তুঙ্গে হলে সকল মত পথ একি মোহনায় একীভূত হয়!
তাঁর ৪টি জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।১ম জানাযা হয়রত শাহজালাল (রহঃ)মাজারে।২য় জানাযা হরিপুর মাদ্রাসা মাঠে।৩য় জানাযা দরবস্ত খেলার মাঠে এবং সর্বশেষ ৪র্থ জানাযা জন্মমাটি রাধানগর ডাঃইদ্রিছ আলী স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত হয়।জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে বাবা মা’র পাশে কবর দেওয়া হয় তিনির ওসিয়ত অসিত অনুযায়ী।
আল্লাহ তোমার হাওলা করলাম,তুমি সবার প্রিয় সেলিম ভাইকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুন।
তিনি অসংখ্য গুণগ্রাহী কর্মী সমর্থক,পরিবার ২ছেলে এক মেয়ে,৫ ভাইব ১ বোন সহ আত্মীয়স্বজন রেখে যান।মৃত্যুকালে তাঁর বয়েস হয়েছিল ৭৩ বছর।”এমন জীবন তুমি কর হে গঠন,মরিলে হাসিবে তুমি কাঁদিবে ভূবন”তিনির জীবন এই কথামালার আলোকেই গড়েছিলেন।তাই হাসছেন তিনি আর কাঁদছে মানুষ।
লেখকঃ রাজনৈতিক কর্মী,সংগঠক ও আহবায়ক কমিটির সদস্য,গোয়াইনঘাট উপজেলা ছাত্রদল।