শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। মেরুদণ্ডহীন মানুষ যেমন দাঁড়াতে পারে না, ঠিক তেমনি শিক্ষাবিহীন কোনো জাতি পৃথিবীতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না। মানুষের মধ্যে আল্লাহ প্রদত্ত যেসব গুণাবলি ও সুপ্ত প্রতিভা রয়েছে,তার বিকাশ ঘটে শিক্ষার মাধ্যমে। পবিত্র কুরআনের প্রথম কথাই হলো ‘পড়’। মানব জাতির উদ্দেশ্যে এটিই হলো আল্লাহর প্রথম নির্দেশ।
আজ ৫ই অক্টোবর, বিশ্ব শিক্ষক দিবস।১৯৯৫ সাল থেকে প্রতি বছর ৫ অক্টোবর তারিখ বিশ্ব ব্যাপী পালিত হয়ে থাকে বিশ্ব শিক্ষক দিবস। এই দিবসটি শিক্ষকদের অবদানকে স্মরণ করার জন্য পালন করা হয়।
ইউনোস্কোর মতে, বিশ্ব শিক্ষক দিবস শিক্ষা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ পালন করা হয়। বিশ্বের ১৫১টি দেশে এই দিবসটি পালিত হয়ে থাকে। এই দিবসটি পালনে এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল (Education International – EI) ও তার সহযোগী ৪০১টি সদস্য সংগঠন মূল ভূমিকা রাখে। দিবসটি উপলক্ষে ইআই প্রতি বছর একটি প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করে থাকে যা জনসচেতনতা বৃদ্ধির সাথে সাথে শিক্ষকতা পেশার অবদানকেও স্মরণ করিয়ে দেয়।
এ বছরের বিশ্ব শিক্ষক দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘শিক্ষা পুনরুদ্ধারের কেন্দ্রবিন্দুতে শিক্ষক’।
ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, পৃথিবীর প্রতিটা দেশ শিক্ষকদের সর্বোচ্চ সম্মান দিয়ে থাকে। কারণ শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর, সমাজ সংস্কারক, আলোকবর্তিকা, সর্বপুরি পথপ্রদর্শক। শিক্ষকদের সম্মান প্রদর্শন করার বিভিন্ন মাধ্যম আছে। আর্থিক মাধ্যমটা কম নয়। কথায় আছে আর্থিক শাস্থি হল সর্বোচ্চ শাস্থি। ক্ষুধার জ্বালায় যখন কাতরাবেন তখন অমৃত বাণী কিভাবে নিঃসৃত হবে। আমার জানামতে সমাজে হাজার হাজার শিক্ষক আছেন, যারা সমাজে মানবেতর জীবন যাপন করেন। বাংলাদেশে এ চিত্রটা সর্বোচ্চ। বাংলাদেশে প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক এমপিওভূক্ত শিক্ষক-কর্মচারী বিভিন্ন মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন পাশাপাশি নন এমপিওভূক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারী সংখ্যাও কম নয়। যারা উৎসব বোনাস, বাড়ি ভাড়া ও অন্যান্য সুবিধা নাম মাত্র পেয়ে থাকেন অথচ এমপিওভূক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো সিংহভাগ শিক্ষা প্রদান করে থাকেন। এ বছরের বিশ্ব শিক্ষক দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ”শিক্ষা পুনরুদ্ধারের কেন্দ্রবিন্দুতে শিক্ষক’। যদি শিক্ষকবৃন্দ আর্থিকভাবে অবরুদ্ধ থাকে তাহলে শিক্ষা পুনরুদ্ধার কে করবে? আপনারা নিশ্চয় অবগত আছেন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, বাংলাদেশের স্থপতি ব্ঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিক্ষার জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। উনার স্বপ্ন ছিল বাংলাকে সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করা। যার কারণে স্বাধীনতা উত্তর প্রায় ২৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করে সোনার বাংলা সূচনা করে ছিলেন। আমরা বিশ্বাস করি “মুজিববর্ষে” তিন বারের প্রধানমন্ত্রী, উনার ঔরসজাত তনয়া, মানবতার ফেরিওয়ালা,আধুনিক বাংলার রূপকার,জননেত্রী শেখ হাসিনা এমপিওভূক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো জাতীয়করণ করে নতুন মাইল ফলক উম্মুচন করবেন। আর আপনারা যারা নীতিনির্ধারক, তাদের অনুরোধ করব, জ্বলন্ত মোমবাতি থেকে আগুন নিলে যেমন কমে না তেমনি এমপিওভূক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো জাতীয়করণ করলে আপনাদের আর্থিক সমস্যা হবে না বরং আপনাদের সন্তানরা অল্প খরচে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে। অবশেষে শিক্ষকসমাজকে বিনীত অনুরোধ করব, আপনারা বৃদ্ধ লোক আর তিন সন্তানের গল্প জানেন,আপনাদের উদ্দেশ্যে যদি জাতীয়করণ হয়ে থাকে তাহলে অনুগ্রহপূর্বক এক টেবিলে বসে কাজ করে যান। আমি বিশ্বাস করি জাতীয়করণ দূরে নয়,সুবহে সাদিক দেখা যাচ্ছে, ঊষা আসবেই। আমরা অস্র ছাড়া স্বাধীনতা অর্জন করতে পারি আর জাতীয়করণ করতে পারব না?
আমার লেখায় কোন ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আল্লাহ হাফেজ।
মোঃ জিয়াউর রহমান, সহকারী শিক্ষক (গণিত) তেলিখাল উচ্চ বিদ্যালয় কোম্পানিগঞ্জ, সিলেট।
ও
সাধারণ সম্পাদক, মাধ্যমিক সহকারী শিক্ষক পরিষদ, কোম্পানীগঞ্জ, সিলেট।