ঢাকা,৪ঠা জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ২১শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বাণীগ্রাম ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী ব্যতিক্রমী কৌশল

175354kalerkantho_jpg.jpg

বুধবার (৫ জানুয়ারি) সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার ৯ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। প্রার্থীদের আনুষ্ঠানিক প্রচার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। এখন ভোটের অপেক্ষায় প্রার্থীরা। নির্বাচনে আগেই আলোচনায় উপজেলার ৭ নম্বর দক্ষিণ বাণীগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী লোকমান উদ্দীন (প্রতীকÑ মোটরসাইকেল)। তার ব্যতিক্রম পলিসিতে (পরিকল্পনা) বদলে গেছে ভোটের হিসাব।
জানা গেছে, ইউনিয়নের ৯ জন প্রার্থী রয়েছেন। অন্য চেয়ারম্যান প্রার্থীরা যখন এলাকাভিত্তিক ভোটব্যাংক ও মিছিল-শোডাউন নিয়ে ব্যস্ত তখন লোকমান উদ্দীন ভোটার তালিকা ধরে ইউনিয়নের প্রতিটি ভোটারের বাড়ি ছুটে গেছেন। ‘ডোর টু ডোর’ পলিসিতে তিনি ভোটারদের মন জয় করে নিয়েছেন।
মাস্টার লোকমান উদ্দীন গত দুই নির্বাচনেও প্রার্থী হয়েছিলেন। প্রতি বারই তিনি বিজয়ী প্রার্থীর নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী ছিলেন, অর্থাৎ, কিছু ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন। তাই, এবার নিজের নির্বাচনী প্রচার-কার্যক্রমে নিয়েছেন পরিকল্পিত ও ব্যতিক্রমী উদ্যোগ।
এ বিষয়ে প্রার্থী লোকমান উদ্দিন বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদ স্থানীয় সরকারের সর্বনি¤œ স্তর হলেও এ প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব অপরিসীম। চেয়ারম্যান হতে হলে ইউনিয়নের মানুষের সাথে গভীর সম্পর্ক থাকা আবশ্যক। আমি যে জনগণের চেয়ারম্যান হতে চাই, যাদের সেবা দিতে চাই, তারা ভোট দেওয়ার আগে যদি আমায় না চিনে তাহলে কোন ভরসায় আমাকে ভোট দেবে।’
তাই, এবারের ডোর টু ডোর কার্যক্রমে জনগণ তাকে সঠিক মূল্যায়ন করবে বলে আশাবাদী লোকমান।
কোনো ভোটার যদি দাবি করেন আপনি তার কাছে ভোট চাইতে যাননি?Ñ এমন প্রশ্নের জবাবে লোকমান বলেন, ‘ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থীও একজন ভোটার। আমি তাদের বাড়িতেও গেছি। প্রত্যেক সাধারণ ভোটারের বাড়িতে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। হয়তো কাউকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তবে আমি যে তাদের বাড়িতে গেছি তা নিশ্চিত।’
‘যদি কোনো ঘরের দরজায় হাজির না হই, তাহলে ধরে নেবেন এটা আমার অজান্তে বা অসতর্কতাবশত হয়েছি। জেনেশুনে কোনো ঘর বাদ রাখিনি।’
দক্ষিণ বাণীগ্রাম ইউনিয়নের ২৭টি মৌজায় ভোটার রয়েছে প্রায় ৪০ হাজার। চেয়ারম্যান প্রার্থীর একজন সমর্থকের দাবিÑ প্রতীক বরাদ্দের পর লোকমান উদ্দিন এই ২৭ মৌজার লামারতালুক থেকে ক্যাম্পেইন শুরু করেন। প্রতীক বরাদ্দের পরের দিন থেকে তিনি তাঁর গ্রামবাসীকে নিয়ে লামারতালুক মৌজার প্রতিটি ঘরে যান, ভোটারদের ভোট ও দোয়া চান।
পরে, ধারাবাহিকভাবে কান্দিগ্রাম, লামা দলইকান্দি, আকুনী, গুলালপাড়া, নিজ গাছবাড়ী, গাছবাড়ী নয়াগ্রাম, সর্দারমাটি, ছত্রপুর, উত্তর বাণীগ্রাম, দলইমাটি, দক্ষিণ বাণীগ্রাম, ব্রাহ্মণগ্রাম, ঘড়াইগ্রাম, নিজ বাউরভাগ পশ্চিম (উজানীপাড়া), নিজ বাউরভাগ পূর্ব, বাউরভাগ নয়গ্রাম (ধলিবিল দক্ষিণ), কায়স্তগ্রাম, সর্দারীপাড়া, বড়দেশ, উমাগড় পাঁচঘরী মৌজার কোনো ঘরই বাকি রাখেননি লোকমান উদ্দিন।
ওই সমর্থকের দাবিÑ অগ্রহায়ণ মাসের কৃষিকেন্দ্রিক মানুষের ব্যস্ততার কারণে অনেক বাড়িতে হয়তো ভোটার পাওয়া যায়নি। কিন্তু, খালি ঘরের দরজায়ও নিজের লিফলেট রেখে এসেছেন লোকমান।
লোকমান উদ্দীনের মোটর সাইকেল প্রতীকের একনিষ্ঠ কর্মী ও সমর্থক সর্দারমাটি গ্রামের ডা. জাকারিয়া, আব্দুস শহীদ নাসিম, বাণীগ্রামের মোস্তফা কামাল বাবলু, ব্রাহ্মণগ্রামের তাজ উদ্দীন, উমাগড়ের মাওলানা শিব্বির আহমদের সঙ্গে দেখা হয় স্থানীয় একটি বাজারে। তারা দাবি করেন, ‘আমাদের নিজ নিজ গ্রামে মাস্টার লোকমান উদ্দীনকে নিয়ে হেটেছি। তিনি প্রতি ভোটারের দরজায় গিয়ে সালাম দিয়েছেন, ভোট চেয়েছেন। মাত্র কয়েকদিনে প্রতি দরজায় পৌঁছতে হাড়ভাঙা পরিশ্রম ছিল। তবুও, ধনী-গরীব, দলমত নির্বিশেষে প্রতিটি ভোটারের দরজায় নক করেছেন।’
কানাইঘাট উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও বাণীগ্রামের বাসিন্দা মরিয়ম বেগম বলেন, ‘লোকমান উদ্দীন মাস্টার ইউনিয়নের সব দরজায় নক করেছেন। এটা আমার ভালো লেগেছে। এমন করে ইউনিয়নের প্রতিটি দরজায় আর কোনো প্রার্থী নক করেছেন বলে মনে হয় না। একইভাবে নির্বাচিত হলে তিনি যে যেন জনগণের সুখ-দুঃখে দরজায় ছুটে যান। তখন ভোটারদের যেনো ভুলে না যান। এটা আমার প্রত্যাশা।’
হাবিবুর রহমান নামে ইউনিয়নের একজন প্রবীণ ভোটার বলেন, ‘কত নির্বাচন দেখলাম, কিন্তু মাস্টার লোকমান উদ্দিনের মতো কাউকে এভাবে প্রতিটি দরজায় যেতে দেখিনি।’
বাউরভাগ গ্রামের মামুন নামের এক ভোটার বলেন, ‘আমাদের মতো হত দরিদ্র মানুষের দরজায় চেয়ারম্যান প্রার্থীরা সরাসরি ভোট চাইতে খুব কমই আসেন। মাস্টার লোকমান উদ্দিন ভালো মনে মানুষ হলেও আমার পছন্দের প্রার্থী ছিলেন না। অন্য এক প্রার্থীকে ভোট দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু লোকমান অনেক দূরে বাড়ি হওয়া সত্তে¡ও আমার মতো গরিবের দরজায় নিজে সরাসরি এসে ভোট চেয়েছে। এটা আমাকে অভিভূত করেছে। আমি ও আমার পরিবাররের সদস্যরা তাকেই ভোট দেওয়ার চিন্তা করছি।’
প্রসঙ্গত, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে দক্ষিণ বাণীগ্রাম ইউনিয়নে ৯জন প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। এর মধ্যে নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এবং বর্তমান চেয়ারম্যান মাসুদ আহমদ, মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী লোকমান উদ্দীন, রজনীগন্ধা প্রতীক নিয়ে বিএনপি নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান মো. শাহাব উদ্দীন, টেবিল ফ্যান প্রতীক নিয়ে জামায়াত নেতা বুরহান উদ্দীন, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বাবুল রানা (আনারস), জাহাঙ্গীর মাহমুদ (সিএনজি) ও আখলাকুল আম্বিয়া (চশমা), বিএনপি নেতা নাসির উদ্দীন সাদিক ও মাস্টার আব্দুল মালিক খান।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

scroll to top